বেশি ঘুমানোর ক্ষতি

অতিরিক্ত ঘুমানোর ক্ষতিকর দিক: আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি কি?

অতিরিক্ত ঘুমানোর ক্ষতিকর দিক: আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি কি?

ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি ঘুমালে তা আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন, বেশি ঘুমানোর কিছু প্রধান ক্ষতি সম্পর্কে জেনে নিই।

শারীরিক ক্ষতি

অতিরিক্ত ঘুম আপনার শরীরের ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। নিচে এর কিছু প্রধান শারীরিক ক্ষতি তুলে ধরা হলো:

  • ডায়াবেটিস: অতিরিক্ত ঘুমানো মানুষের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। অপর্যাপ্ত ঘুমের মতো অতিরিক্ত ঘুমও শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণ হতে পারে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি: অতিরিক্ত ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর কারণ হলো, অতিরিক্ত ঘুমানো ব্যক্তিদের শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায়, যা স্থূলতা এবং অন্যান্য হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
  • স্থূলতা (Obesity): বেশি ঘুম এবং ওজন বৃদ্ধির মধ্যে একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত ঘুম শরীরের মেটাবলিজমকে ধীর করে দেয়, যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ।
  • মাথাব্যথা: যারা অতিরিক্ত ঘুমান, বিশেষ করে ছুটির দিনে, তারা প্রায়ই মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। মস্তিষ্কের কিছু নিউরোট্রান্সমিটার, যেমন সেরোটোনিন, ঘুমের সময় ওঠানামা করে, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
  • শরীরে ব্যথা: অতিরিক্ত সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে পিঠ এবং ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর কারণ হলো, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো দীর্ঘ সময় ধরে এক অবস্থানে থাকার ফলে মাংসপেশীগুলো শক্ত হয়ে যায়।

মানসিক ও আচরণগত ক্ষতি

অতিরিক্ত ঘুম আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

  • বিষণ্ণতা (Depression): অতিরিক্ত ঘুম বিষণ্ণতার লক্ষণ হতে পারে এবং একই সাথে এটি বিষণ্ণতাকে আরও বাড়িয়েও দিতে পারে। যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন, তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ঘুমানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
  • স্মৃতিশক্তি হ্রাস: যদিও পর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তির জন্য ভালো, অতিরিক্ত ঘুম এর বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। বেশি ঘুমালে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
  • ক্লান্তি: অদ্ভুত শোনালেও, বেশি ঘুমালে সারাদিন ক্লান্তি এবং অবসাদ অনুভূত হতে পারে। এটি আপনার শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে, যার ফলে আপনি সতেজ বোধ করেন না।

সমাধান

অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে আপনি কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন:

  • প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনেও এই রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করুন।
  • একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অ্যালার্ম দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠার অভ্যাস করুন।
  • যদি আপনার মনে হয় যে অতিরিক্ত ঘুম কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণে হচ্ছে, তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

উপসংহার

পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম আপনার স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য সঠিক ঘুমের সময়সীমা মেনে চলা এবং একটি নিয়মিত রুটিন অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url